এবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র খবর শুনে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। যারা এখনও বসতভিটায় রয়েছেন তারাও আছেন ভয়ে। এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বীপের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই প্রবাল দ্বীপসহ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদের তীরে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, দুর্যোগে স্থানীয়দের জন্য উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ শতাধিকের বেশি, হোটেল-মোটেল ও ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ জোন হিসেবে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপের জন্য নৌবাহিনীসহ বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, মেডিক্যাল টিমসহ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে। এর ফলে আজ বৃহস্পতিবার ১১ মে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক নামিয়ে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, ‘সাগরের বুকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বীপের জন্য আমাদের নৌবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দ্বীপে বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে হোটেল-মোটেলসহ অর্ধশতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হটলাইন খোলা হয়েছে। বিশেষ করে দুই দ্বীপের (সেন্টমার্টিন ও শাহপরী) বাসিন্দাদের সচেতনতার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আগে থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’
ইউএনও বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সংস্থার আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হবে। বিশেষ করে দ্বীপের লোকজন যাতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও স্কুল, আবহাওয়া অফিস, ডাকঘর, হোটেলগুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছে।’
এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ‘ইতোমধ্যে কিছু মানুষ দ্বীপ ত্যাগ করেছে। আমরাও ভাবছি, পরিবার নিয়ে টেকনাফে চলে যাবো। ঘূর্ণিঝড় এলে নিচু এলাকা হিসেবে দ্বীপ আঘাত হানতে পারে, কেননা সাগরের মাঝে আমাদের বসতি। এ ছাড়া আগের তুলনায় দ্বীপের অবস্থা ভালো না। সাগরে সামান্য পানি বাড়লে দ্বীপের চারদিক ভেঙে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি ঘূর্ণিঝড় মোখা শক্তিশালী। তাই আমার মতো দ্বীপের সবাই ভয়ে আছেন।’
এ সময় সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সেই পরিস্থিতি এখনও হয়নি। তবে দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকতে প্রত্যেক গ্রামে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রসহ হোটেলগুলোর পাশাপাশি দ্বীপে সিপিপির ১৩০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিছু লোক দ্বীপ ছেড়ে গেছে বলে শুনেছি। তারা কোনও কাজে গিয়ে থাকতে পারে।’
এদিকে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘যেকোনও দুর্যোগে দ্বীপবাসীর জন্য বিজিবি সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপকে বিশেষ নজরদারিতে রাখছি। আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি।’